পাবনা জেলা প্রতিনিধি :
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাবনা সদর উপজেলায় এক নারীকে মারাত্মকভাবে জখম করেছে প্রতিপক্ষের হামলাকারীরা। মুমূর্ষু অবস্থায় সেই নারী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বলে জানিয়েছেন আহত নারীর পরিবারের সদস্যরা।
জানা গেছে- গত ২১ শে ডিসেম্বর বুধবার সকাল ৬ টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামে এমন নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখিত ঘটনায় পাবনা সদর থানায় ৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছে
ওই নারীর স্বামী ইসহাক আলী শেখ।
মামলার বিবরণী সূত্রে জানা যায়- গয়েশপুর ইউনিয়নের সাইফুল ইসলামের ছেলে মোঃ মাহফুর (২০), মোঃ আয়েব আলী (৩৫), ও তার ভাই আবুল কালাম (৪৫), আহম্মদ আলীর ছেলে মোঃ আহাদ (২৭), একই গ্রামের মোঃ শয়ন (২৯) ও মোছাঃ সবুরা খাতুন (৩২) উল্লেখিত সবাই মিলে ঘটনার দিন সকালে দা, লোহার রড, স্টিলের পাইপ, নিয়ে
ইসহাক আলীর বাড়িতে শেখের বাড়ির ভিতর ঢুকে, তার স্ত্রী মোছাঃ আজেদা (৩৮) খাতুনকে অশ্লীলভাবে গালি গালাজ করতে থাকেন। এমতাবস্থায় আজেদা খাতুন নিষেধ করলে, মোঃ আবুল কালামের নির্দেশে সঙ্গে থাকা লোহার হাসুয়া দিয়ে আজেদার মাথার উপরে কয়েকটি কোপ দেন মাহফুজ (২০) নামের এক হামলাকারী। রক্তাক্ত অবস্থায় আজেদা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে, পালাক্রমে আঘাত করতে থাকেন হামলাকারীরা। এসময় আজেদার নাকের উপরে, ডান চোখের নিচে ও বাম চোখের ভ্রুতে শক্ত আঘাত লেগে গুরুতর আহত হয়ে পড়েন অসহায় নারী।
মামলার অভিযোগকারী আজেদার স্বামী ইসহাক আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান- ঘটনার অপর আর এক হামলাকারী আয়েব আলীর হাতে থাকা লোহার রড়ের আঘাতে আমার স্ত্রীর ৬ টি দাত ভেঙ্গে যায়।
তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে আরো বলেন- রক্তাক্ত অবস্থায় এত মারধরের পরেও নরপিশাচরা তারা ক্ষান্ত হয়নি! একেক জন ইচ্ছেমতো আঘাত করে, এতে আজেদার ডান পায়ের হাড়টাও ভেঙ্গে যায়, বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাড়িতে থাকা ছেলেমেয়েরা মাকে বাচাতে এগিয়ে আসলে তাদের ও মারধর করেন হামলাকারীরা। ছেলে-মেয়েদের আর্তচিৎকারে এলাকাবাসীদের সহায়তায় কোন রকমের প্রানে বেঁচে যান আজেদা। তাকে রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে পাবনা সদর হসপিটালে ভর্তি করলে, আজেদার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত রাজশাহীতে প্রেরণ করা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে – হামলাকারীরা সকলেই একই গ্রামের বাসিন্দা, এমন পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় এলাকায় চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন, মাছিমপুর গ্রামের ইসহাক আলীর প্রতিবেশী। তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হওয়ার শর্তে বলেন- অনেকদিন হলো দু পক্ষের মধ্যেই ঝামেলা চলছিল, তাই এমন ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে ; তবে আগামীতে এর চাইতে ও বড় ধরনের সংঘাত সংঘটিত হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
গয়েশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন জানান- দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সমস্যা চলেছে। এর আগে আমার পরিষদে তাদের হাজির করে সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা মামলা দায়ের করেছে একাধিক। সবশেষে আবারো তাদের মিমাংসার জন্য ডাকা হলে একপক্ষ উপস্থিত হলেও, সম্প্রতি হামলার স্বীকার হওয়া পক্ষের উপস্থিত ছিলনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ হামলার দুইদিন পর আজেদার স্বামী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন পাবনা সদর থানায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক খালেকুজ্জামান ফোনে জানান- আজেদার স্বামীর দায়ের করা মামলার তদন্ত চলছে, আহত আজেদা চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
একদিকে স্ত্রীর মরণাপন্ন অবস্থা ; অন্যদিকে থানায় মামলা করার পরও আসামীরা এখনো এলাকায় বুক উচিয়ে প্রভাব বিস্তার করছে প্রকাশ্যে!! এমন পরিস্থিতি বেশ হতাশ হয়ে পড়েছেন আজেদার পরিবার। পরিবারের একাধিক লোকের সাথে কথা বললে তারা বলেন- আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার না করলে, তাদের দ্বারা আবারো হামলার স্বীকার হতে পারেন বলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ইসহাক আলীর পরিবার।
বর্তমান যুগে এমন ফিল্মি স্টাইলে হামলা, কোন নারীকে এতটা শারীরিক নির্যাতন; যা কিনা কোন সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদাসীনতা বেশ নিন্দনীয় বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ। অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেফতার করে ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, মাছিমপুর গ্রামে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
Leave a Reply