নড়াইল প্রতিনিধিঃ
শিক্ষক জাতী গঠনের কারিগর। পিতা মাতার পরেই মর্যাদার দিক দিয়ে শিক্ষকের অবস্থান। কিন্তু শিক্ষকের কারনে যদি কোমলমতি শিশুরা বিপথগামী হয় অপসংস্কৃতির দিকে ঝুকতে উৎসাহিত হয় তবে সেটা অবশ্যই জাতীর জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ভোজের দিনের একটি ভিডিও তে দেখা যায় বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক(গণিত) শক্তিপদ বিশ্বাস ছাত্রদের সাথে নিয়ে বিকট শব্দের সাউন্ড বক্সে অপসংস্কৃতি চালিয়ে ডিজে ড্যান্সে উন্মাদনা করছেন।
অসহনীয় শব্দে শিক্ষকসহ আশেপাশের বৃদ্ধ ও জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষেরা পড়েন চরম বিপদে। প্রধান শিক্ষক নিজে বার বার অনুরোধ করেও ডিজে ড্যান্স থামাতে ব্যর্থ হন।জানা যায়, প্রাইভেট বাণিজ্য রমরমা রাখতেই বয়ঃসন্ধিকালের অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থীদের অপসংস্কৃতি,অসামাজিক কার্যকালাপে মাতিয়ে রাখেন তিনি।এ ছাড়া শক্তিপদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ক্লাসে না পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বাসায় প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করা, বিদ্যালয়ে অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও রয়েছে বিস্তর।
নাম প্রকাশ না করে একজন শিক্ষক বলেন, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালের চঞ্চলতা থাকে এ সময় তারা অপসংস্কৃতি,অসামাজিক কর্মকান্ডে আনন্দ উপভোগ করতে চায়।
তাই তারা অনুশাসন পছন্দ করে না।কিছু শিক্ষক প্রাইভেট বাণিজ্য ধরে রাখতে ছাত্র-ছাত্রীদের অনুশাসন না করে অপসংস্কৃতি,অসামাজিক কর্মকান্ডে উৎসাহিত করে।অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েরা আনন্দ করার জন্যই শুধু ঐ শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায় এবং অভিবাবকদের বলে এই স্যার খুব ভালো পড়ায়। ঐসব স্যারেরা (অনুশাসন করা) ভালো পড়ায় না।তিনি আরো বলেন,এইসব শিক্ষক সহশিক্ষার নামে শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে সিনেমার প্রেমের গান গাওয়ান।
অভিভাবকেরা জানান,স্যারের কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষার খাতায় ভালো লেখেও ভালো নম্বর পাওয়া যায় না।
ফলে ছেলে মেয়েদের মন ভেঙ্গে যায়।প্রত্যেকটি ভাল ছাত্রের বাসায় গৃহ শিক্ষক রয়েছে এবং তাদের পড়াশোনার মূল দায়িত্ব গৃহশিক্ষকই পালন করেন।
সন্তানের জন্য খাতা চ্যালেঞ্জ করতে মানসিক দূর্বলতা কাজ করে, বাধ্য হয়ে ব্যাচে পড়াতে পাঠায়।অভিবাবকেরা আরো বলেন, প্রাইভেটে প্রতিটি ব্যাচে ২৫-৩০জন শিক্ষার্থী রয়েছে এখানেও কোন পড়াশোনা হয় না।এতে সময়,অর্থ অপচয় আর মানসিক টেনশনে থাকতে হয় সারাটা দিন। কি করব আমরা অভিবাবকেরা সন্তানের লেখাপড়া করাতে গিয়ে অসহায় হয়ে পড়ছি।
শক্তি পদ বিশ্বাসের বাড়ির সামনের এক দোকানদার বলেন, শক্তি পদ বিশ্বাস সরকারি চাকুররি আগে মার্কেটিং এর চাকরি করত তাই সে প্রাইভেট মার্কেটিং ভালো বোঝে। সবাইকে বলে বেড়ায় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের গৃহশিক্ষক তিনি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠিত ছাত্রদের বাসায় স্বপ্রনোদিত গিয়ে বলে আমাকে দাওয়াত করে নিয়ে গেছে। অথচ খোজ নিয়ে দেখা গেছে সব মিথ্যা কথা।
স্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র (বর্তমানে চিকিৎসক) বলেন, কোন একজন নির্দিষ্ট শিক্ষক নয় প্রাইমারি থেকে শুরু করে কলেজ পর্যায়ের অনেক শিক্ষকের অবদান রয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষকের কাছে আমরা ঋণী।
সরকারি চাকুরিতে ২/৩ বছরের বেশি একই কর্মস্থলে চাকুরির সুযোগ না থাকলেও অদৃশ্য শক্তির বলে শক্তিপদ বিশ্বাস দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে চাকুরি করছেন একই প্রতিষ্ঠানে। নিজ জেলায় দীর্ঘকাল একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করায় স্কুল প্রশাসনও তার কাছে জিম্মি।
এ বিষয়ে খোঁজ নিতে সংবাদ কর্মীরা সরেজমিনে শক্তি পদ বিশ্বাসের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, রীতিমতো স্কুল খুলে পড়াচ্ছেন তিনি। সংবাদ কর্মীরা শক্তি পদ বিশ্বাসের সাথে কথা বলতে চাইলে বাড়ির গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।ফোনে শক্তি পদ বিশ্বাস প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়ে বলেন,জেলা প্রশাসক অনুমতি দিয়েছেন। আর ডিজে ড্যান্সের ব্যাপারে বলেন,শিক্ষার্থীদের নিয়ে আনন্দে থাকার চেষ্টা করি।
এ বিষয়ে নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ আব্দুল মালেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, আমি নতুন এসেছি এসব কিছু আমার জানা নেই তবে কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে বাসায় প্রাইভেট পড়ায় তার দায়িত্ব আমার না। আর আমার অনুমতি ছাড়াই স্কুলের আঙ্গিনায় সাউন্ড বক্স এনে এ সব করছে।আমি বার বার তাদেরকে নিষেধ করছি, অনুরোধ করছি কিন্ত তারা কোনটাই শুনে নাই,আমি তাহলে তাদের কি করতে পারি?
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন,নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে বাসায় প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়ে আমরা কোন শিক্ষককে অনুমতি দেয়নি।যদি কেউ পড়ায় তাদের নিজস্ব বিষয়।
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষক হলেন জাতি গড়ার কারিগর। শিক্ষক যখন নিজের প্রাইভেট বাণিজ্য করতে শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসে না পড়িয়ে বাসায় প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন।এমনকি এ ব্যবসা রমরমা রাখতে শিক্ষার্থীদের অপসংস্কৃতি,অসামাজিক কার্যকালাপে উদ্বুদ্ধ করেন। তখন অভিবাবকেরা হয়ে পড়েন অসহায়। এ ভাবে কিশোর গ্যাং কালচারের ফাঁদে পড়ে ধংস হচ্ছে অগণিত জীবন।
Leave a Reply