 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    
মোঃ জুলহাস উদ্দিন হিরো, স্টাফ রিপোর্টার।
শেরপুরে গত ক’দিনের টানা বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি উজানে উন্নতি হলেও ভাটি অঞ্চলের ১৫ ইউনিয়নে অবনতি হয়েছে।
ইউনিয়নগুলো হলো শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিল,গাজিরখামার ও ধলা। নকলা উপজেলার উরফা,গনপউদ্দিনও নকলাসদর। ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্ধা, মালিঝিকান্দা গৌরিপুর, ধানশাইলও সদরের একাংশ।
নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর, নয়াবিল,মরিচপুড়ান,রুপনারায়নকুড়া,কলসপাড়,যোগানিয়া,ও বাগবের ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।
নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালীর পানি কমতে শুরু করেছে। অপরদিকে উজানের পানি নেমে নিন্মাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে শতশত কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়ে জেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সড়কও জনপদ বিভাগের ও এলজিইডি’র অসংখ্য রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়েছে।
এখন পযর্ন্ত নারী পুরুষসহ নিহত ৮ জন। পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার। উজানে নদীগুলোতে পানি কমলেও
নিম্নাঞ্চলে বাড়ছে পানি। ঢলের পানি কমতে শুরু হলেও কমেনি বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। সরকারিভাবে যে পরিমানের ত্রান বিতরন করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল
পাহাড়ি ঢলের ভয়াবহ বন্যায় দুই সহোদর ভাইসহ ৭জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- নন্নী ইউনিয়নের অভয়পুর গ্রামের সহোদর দুই ভাই হাতেম আলী ও আলমগীর হোসেন, রাস্তা পাড় হতে গিয়ে নয়াবিল ইউনিয়নের আন্ধারুপাড় গ্রামের ইদ্রিস আলী, পানিতে ডুবে বাঘবেড় ইউনিয়নের বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ওমিজা বেগম ও বানের পানিতে ভাঙা রাস্তা পাড় হওয়ার সময় পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের আব্দুল হেকিমের স্ত্রী জহুরা বেগম ও নকলা উপজেলায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে,
নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি রাত থেকে কমতে শুরু করেছে।
ফলে উজানে ৬টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে অবনতি হয়েছে।
পানিবন্দি মানুষ হাঁস- মুরগি, গরু ছাগল সরিয়ে আনতে সেনাবাহিনীর কাজ করছে। নেয়া হচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্রে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে ভোগাই নদীর পানি বিপদ সীমানার ৬৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেল্লাখালী নদীর পানি বিপদ সীমানার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রনব কুমার কর্মকার জানান পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে ৬ হাজার পুকুরের ৫০ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে।
একর জমির আমন ফসল ও শাক সব্জি আবাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে গ্রামিন রাস্তাঘাট, সেতু বিধ্বস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। এতে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে শতশত পথচারীদের।
স্থানীয়রা বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট ও বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
পানিবন্দি এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। গবাদি পশুর খাদ্য সংকটসহ গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন পানিবন্দি এলাকার মানুষ। বহু খামারির মুরগির খামারের ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
শেরপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ জসিম উদ্দিন জানান বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বাহিত রোগবালাই যাতে ছড়িয়ে পরতে না পারে এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য কর্মীরা এলাকায় কাজ করছে।
পানিবন্দি এলাকার লোকজনের মাঝে পানি বিশুদ্ধকরন টেবলেটসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
আকর্ষিক ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে কয়েক হাজার কাচা ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গৃহহীন অনেকে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
আবার অনেকেই সন্তানাদি নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। অনের বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও বিধ্বস্ত বাড়ি ঘরে জ্বলছে না চুলা।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে পরিমানের শুকনো খাবার ও রান্না করা খিচুড়ি বিতরন করা হয়েছে। তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
হাজার হাজার একর জমির আমন ফসল ও শাকসবজি ক্ষেত পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। উঠতি আমন ফসলের ক্ষতি সাধিত হওয়ায় হাজারো কৃষক দিশেহারা হয়ে পরেছে।
শ্রমজীবি মানুষের হাতে কাজ নেই । অনেক পানিবন্দি এলাকায় এখনো ত্রান পৌছায়নি তারা অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো পানির নিচে। পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে বন্যা কবলিত এলাকার রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ।
এলজিইডি’র শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিধ্বস্ত রাস্তাঘাটের তালিকা করা হয়নি। পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পর তালিকা প্রণয়ন করা হবে।
শেরপুর জেলা খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির বলেন পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর আমন আবাদ নিমজ্জিত হয়েছে।
৩শ হেক্টর জমির শাক সব্জি ক্ষেতের ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
তিনি বলেন ক্ষতির পরিমান আরো বেশি হতে পারে। এ বিষয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা মাঠে কাজ করছে পরবর্তীতে তা জানা যাবে।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানি কমতে শুরু করায় পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।
তবে নালিতাবাড়ী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন এখনও পানি বন্দি রয়েছে। পানিবন্দি এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নিতে সেনাবাহিনী কাজ করছে।
তিনি বলেন গৃহহীন পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারিভাবে সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি বেসরকারি ভাবে ও ত্রান বিতরন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আসাবাদি তিনি।
Leave a Reply