মোহাম্মদ মাসুদ
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বাকলিয়ায় ১৯নং ওয়ার্ড অফিসে দুর্নীতি তথ্য সংগ্রহেের জেরে সাংবাদিক হামলার শিকার। স্বাধীন সাংবাদিকতায় পেশাগত কাজে দায়িত্ব পালনে সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমনে আহত খবরে জনমনে তীব্র মিশ্র প্রতিক্রিয়া। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সরকারি সেবা অফিস আদালতে জনবান্ধব সেবার বিপরীতে দুর্নীতি অনিয়ম নতুন কিছু নয়। বাকলিয়া ওয়ার্ড অফিসে ব্যাপক দুর্নীতি নানা অনিয়মের যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ সত্বেও বছরের পর বছর চলছে নাগরিক সেবার নামে ঘুষ বাণিজ্য ও অসৎ কর্মচারীদের বেআইনি ভাবে উপরি ইনকামের নামে আয় উৎস নিয়মে পরিণত হয়েছে । চলছে রমরমা ঘুষের লেনাদেনাা। টাকার বিনিময় ঘোষ ছাড়া হয় না সরকারি সুযোগ সুবিধা নাগরিক সেবা প্রদান। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে ছাত্র জনতা রক্ত সাগরে বিনিময়ে প্রাণ বিসর্জনে অর্জিত নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় স্বাধীনতা। বাস্তবতায় বাঁধাগ্রস্থ কঠিন জটিলতা আকার ধারণ করছে নানা অনিয়ম ইস্যুতে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের গণ জন অধিকার আদায়ের পূর্বশর্ত। এসব অনিয়ম নানা কারণে ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে অনিয়ম-দূর্নীতিমুক্ত সমাজ রাষ্ট্র বিনির্মাণের ভবিষ্যৎ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য।
গত (৩০ এপ্রিল) বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের ১৯ নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাংবাদিক ও কলামিস্ট, চট্টগ্রাম সাংবাদিক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ওসমান এহতেসাম এবং সাংবাদিক মো. জাহাঙ্গীর আলম নির্মমভাবে হামলার শিকার হন।
ঘটনাক্রমে জানা যায়, ওয়ার্ড অফিসের দুর্নীতি ও অনিয়মের ভিডিও প্রমাণ সংগ্রহ করার সময় ১৯নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের সচিব সমর কৃষ্ণ দে এবং জন্মনিবন্ধন সহকারী মো. মনসুরুল আলম মানিকের নির্দেশে বাকলিয়া থানা শ্রমিক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল বারেক ও তার সহযোগীরা (ফারুক, কবির ও সোহাগ) সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাদের ক্যামেরা ও স্ট্যান্ড ভেঙে ফেলে, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে বাকলিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা গেলেও টাকা ও সাংবাদিকতার অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার হয়নি। পরবর্তীতে আহত জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
জানা যায়, সাংবাদিকরা ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারী মো. মনসুরুল আলম মানিকের বক্তব্য নেওয়ার জন্য ওয়ার্ড অফিসে যাওয়ার পথে এক ভুক্তভোগী নারীর সাথে দেখা হয় তাদের। ওই নারী সাংবাদিকদের জানান, তিনি ৭০০ টাকার বিনিময়ে একটি জন্মনিবন্ধন সংশোধন করেছেন। এ কথা শোনার পর সাংবাদিকদের অনুরোধে ওই নারীসহ তারা ওয়ার্ড অফিসে প্রবেশ করেন। সেখানে তারা দেখতে পান, মানিক দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে অফিসের তালা বন্ধ করে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় মানিককে ৭০০ টাকা নেওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা সচিবের সামনে স্বীকার করেন এবং ওই নারীকে প্রথমে ৫০০ টাকা ও পরে আরও ১০০ টাকা ফেরত দেন। এরপরই মানিক ও ওয়ার্ড সচিব ফোন করে ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে এসে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। সাংবাদিকদের কাছে যারা দুর্নীতির অভিযোগ দিয়েছেন, তারা সবাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক সংস্থাসহ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম সাংবাদিক সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি বলেন, সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলা গণতন্ত্র ও তথ্যের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি করছি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর পদক্ষেপ চাই। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বাকলিয়ার তিন ওয়ার্ডের সচেতন নাগরিকরা। তাদের দাবি, যারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন, তারা রাজনীতিবিদ নন, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। একজন রাজনীতিবিদের কাজ জনগণের সেবা করা, কিন্তু তারা তা না করে ওয়ার্ড অফিস থেকে সাময়িক লাভের জন্য জনগণের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিলেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরি।
সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি, সাংবাদিকদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তারা বাংলাদেশের অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়। তারা চায়, বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় দলকে বিতর্কিত করতে। এমন সন্ত্রাসী চক্র দলের নাম ব্যবহার করে বলেই আজ এতো সমালোচনা! আমি চাই, আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।
ওসমান এহতেসাম বলেন, আমরা ওয়ার্ড অফিসের দুর্নীতি নিয়ে সাড়ে তিন মাস ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছি। আমাদের ঢাকা অফিসে হাজারের অধিক দুর্নীতির ভিডিও প্রমাণ পাঠানো হয়েছে, যা শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। জীবন থাকলে কলম চলবেই—জীবন কেড়ে নিলেই কেবল তা থামবে।
১৯নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের সচিব সমর কৃষ্ণ দে তিনি বলেন,গতকালকেউ তারা এসেছিল তাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আমি যথাযথ আন্তরিক দায়িত্বশীল ভাবে ভাবে দিয়েছি। আজকেও তারা এসেছিল। তাদের সাথে কথা হয়েছে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ড অফিসের সচিব বিদায় অনুষ্ঠানে আমরা সকলেই অফিস ত্যাগ করি।আমাদের সামনে কোন অঘটন অনিয়ম হয়নি। কিন্তু এখন দেখছি তারা ভিন্ন কিছু বলছে যা আমি কিছুই জানিনা। এ ধরনের অভিযোগের কোন সত্যতা নেই।
সাংবাদিকদের উপর হামলা মারামারি ও অনিয়ম দুর্নীতি এই ধরনের যদি কোন তথ্য সত্যতা আমাদের জানামতে কোন ঘটনা ঘটেনি। কেউ যদি অনিয়ম করে থাকে তার সত্যতা অনিয়ম বেরিয়ে আসবেই। তারা আমাদের পেছনে লেগেছে এবং শুধুশুধু এখন দেখছি আমাদেরকে দোষারোপ করছে।
এ ঘটনায় বাকলিয়া থানার কর্তব্যরত অফিসার ইনচার্জ ইখতিয়ার উদ্দিন জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে যারা অভিযোগ করেছে এবং অভিযুক্তরা একই সাথের মানুষ। অভিযোগের ভিত্তিতে সত্য তদন্তে দোষীদের প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ অভিযুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৯ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা (প্রশাসক) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রণয় চাকমা বলেন, গতকাল দুপুরের এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি । আর কেউ যদি সরকারি কাজে আইন পরিপন্থী ঘোষ দুর্নীতি অন্যায় অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত থাকে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় আইনের আওতায়েন হবে। আর সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে বাঁধা হামলাকারীদের অবশ্যই আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তিরসহ যথাযথ পদক্ষেপে সব রকম সহায়তা করবেন।
উল্লেখ্য :
বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকারের আমলেও সুকৌশলে করছে এসব অন্যায় অনিয়ম। পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ অসহায় ও নিরুপায়। অনেকেই ঘুষের টাকা দিয়েও মিলছে না নাগরিক সেবাসুবিধা। দিনের পর দিন হয়রানি ভোগান্তি পেতে হচ্ছে নানা ফাঁদে ফাঁকে পড়ে। সাধারণ মানুষের আপত্তি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন সক্রিয় প্রয়োজনীয় যথাযথ পদক্ষেপ না থাকায় দিন দিন বাড়ছে জন চরম ভোগান্তি।
বাড়ছে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা সেভার প্রতি অনাস্থা। সরকারি সুযোগ-সুবিধা অফিস গুলো হচ্ছে জনবান্ধবহীন। অপক্ষমতা রাজনৈতিক ছত্রছায়া অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের যুগ স্বদেশে এসব অপারে দ্বিধা থেকে যায় আড়ালে ধরা ছোঁয়া নাগালের বাহিরে। সত্যতা বাস্তবতা অনুসন্ধান করতে গিয়ে উল্টো সাংবাদিকরাই নির্মমভাবে হামলার শিকার হয়ে আহত হয়।বর্তমানে চিকিৎসাধীন চমেক হাসপাতালে ! প্রশ্ন উঠেছে জনমনে সাধারণ মানুষের অবস্থান সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্রিয়তা নিয়ে। নাগরিক নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
জনগণের টাকায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের জীবনহানির ঝুঁকি নিতে হচ্ছে—এটি কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক সমাজে কাম্য নয়। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত না করলে সুশাসন ও জবাবদিহিতা অর্জন অসম্ভব।
সরকার, প্রশাসন ও সুশীল সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগে সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার এখনই সময়। গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর ক্রমাগত হামলা ও হয়রানির ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে। পরিস্থিতিতে হচ্ছে নাগরিক নিরাপত্তাহীনতায় ঝুঁকিতে।
সংস্কার ও বৃহৎ জনস্বার্থে নাগরিক সেবা ও অন্তবর্তীকালীন ইতিবাচক সরকারের কার্যক্রম ইতিবাচক আলোচিত হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই। কিন্তু বাস্তবতায় কোন কোন ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে গোপনে ষড়যন্ত্র চলছেই সর্বত্রই। নব্য ফেসিস্ট হিসেবে বর্তমান মাঠ ময়দানে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়া অপক্ষমতা নানা অনিয়মে সমালোচিত হচ্ছে।যা প্রকাশিত হচ্ছে গণমাধ্যম প্রিন্ট পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। যার ব্যাপক চাঞ্চল্যকর আলোচনা গুঞ্জন শোনা যায় সাধারণ মানুষের মাঝে। ভুক্তভোগী প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখামুখে সারাদেশ জুড়ে। প্রয়োজন প্রশাসন ও সচেতন মহলের সুনজর এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ব্যক্তিবর্গদের দ্রুত হস্তক্ষেপে বাস্তব মুখী পদক্ষেপ জরুরী।