জুলহাস উদ্দিন হিরো, স্টাফ রিপোর্টার।
শেরপুরের নকলায় এবার বোরো আবাদের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে কৃষকরা তাদের বোরো আবাদ কাটা শুরু করেছেন। বৈরী আবহাওয়ার আশঙ্কায় যেসব এলাকার ধান ৭৮% থেকে ৮০% পেকে গেছে সেগুলো কেটে মাড়াই ও শুকিয়ে ঘরে উঠাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষকরা। এ যেন বোর ধান কাটা মাড়াইয়ের মহোৎসব চলছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার ১২ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে বোর ধানের আবাদ করা হয়েছে। অর্জিত মোট আবাদের মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হয়েছে ৯ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে এবং উচ্চ ফলনশীল উফশী জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে ২ হাজার ৬১৫ হেক্টরে।
বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলায় না পড়লে চলতি মৌসুমে উপজেলায় অন্তত ২০০ কোটি টাকার ধান উৎপাদন হতে পারে। তাছাড়া উপজেলায় উৎপাদিত ধান থেকে ৫০৩ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী।
ভূরদী ব্লকে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর জানান, আবাদযোগ্য পতিত জমিকে বোরো চাষের আওতায় আনতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে এবছর ভূরদী ব্লকের কৃষকরা তাদের অনেক পতিত জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। তিনি আরো জানান, পতিত জমিতে বোরো ধানের আবাদ করায় অন্যান্য জমির তুলনায় ভালো ফলন হয়েছে।
বাউশা কবুতরমারী ব্লকে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় ও কৃষকদের আগ্রহের ফলে এবছর উপজেলার আবাদযোগ্য অনেক পতিত জমিকে বোরো আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। আগামীতে আবাদ যোগ্য সব পতিত জমিকে কৃষি আবাদের আওতায় আনার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব মো. ছায়েদুল হকসহ কয়েকজন কৃষক সদস্য জানান, আগামীতে আবাদ উপযোগী তাদের সব পতিত জমিতে বোরো ধান রোপণ করবেন। তারা জানান, রোপন ও কাটার ভরা মৌসুমে শ্রমিকের মজুরি মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক কারণেই কৃষকরা অপেক্ষাকৃত কম লাভবান হচ্ছেন। তাই সরকার কর্তৃক ভর্তুকি মূল্যে প্রদেয় কৃষিযন্ত্রের বরাদ্দের পরিমাণ বা সংখ্যা বৃদ্ধি করলে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিশেষ করে প্রকৃত কৃষকদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যের কৃষিযন্ত্র সমূহ সঠিকভাবে বিতরণ নিশ্চিত করতে পারলে দেশের কৃষি অর্থনীতি আরো দ্রুত সমৃদ্ধ হবে বলে স্থানীয় কৃষক-কৃষাণীরা মন্তব্য করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী জানান, এবার আবহাওয়া বোরো আবাদের অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের দাম ভালো থাকায় কৃষকরা খুশি। তিনি আরো জানান, এবছর উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধানের মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির নামে হাইব্রিড জাত যেমন- এসআর, তেজ গোল্ড, এসিআই, জনক রাজ, রুপসী বাংলা, সোনার বাংলা, কৃষিবিদ, হীরা, ব্যাবিলন, বালিয়া, ইস্পাহানী, ময়না, টিয়া, সম্পদ এবং উফশী জাতের ধানের মধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ব্রি) কর্তৃক উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধান বেশি আবাদ করা হয়েছে। তাছাড়া রাজস্ব খাতসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এবছর উপজেলায় বেশকিছু প্রদর্শনী প্লটে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে এবং ভালো বীজ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বীজ উৎপাদন প্রদর্শনীতেও বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে।
কৃষি অফিসের সিটিজেন চার্টারের তথ্যানুযায়ী, উপজেলার ১১৭টি গ্রামের ৩২ হাজার ৪৫টি কৃষি পরিবার ৭৬ হাজার ৯০০ একর আবাদি জমিতে কৃষি কাজ করেন। এরমধ্যে এক ফসলি জমি ২ হাজার ৭৫০ একর, দুই ফসলি ২২ হাজার ৬০০ একর ও তিন ফসলি জমি রয়েছে ৯ হাজার ৬৫০ একর। তবে উপজেলায় নিট ফসলি জমি আছে ৩৬ হাজার ২৫০ একর।