সিদ্দিকুর রহমান, বেরোবি প্রতিনিধি:
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) গত বছরের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের ওপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সশস্ত্র হামলার ঘটনায় অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা দায়ের করেছে। এই মামলায় ছাত্রলীগ, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ ৭১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরও ৮০ থেকে ১০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী রেজিস্ট্রারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রংপুরের তাজহাট থানায় বুধবার (০৭ মে, ২০২৫) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১১, ১৫ এবং ১৬ জুলাই তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও সংলগ্ন মহাসড়কে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। সেই সময় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠিসোটা, রড, ইট-পাটকেল, ছোরা ও হাতবোমা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। শুধু তাই নয়, পুলিশ বাহিনীও শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি নিক্ষেপ করে। এই হামলায় ইংরেজি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন এবং বহু শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।
মামলায় অভিযুক্ত ৭১ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী (৩৬ জন), ২ জন শিক্ষক, ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৮ জন পুলিশ সদস্য এবং ১২ জন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী রয়েছেন। এছাড়াও, আরও ৮০ থেকে ১০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকেও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
বহুল আলোচিত অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিম, যুগ্ম সম্পাদক মাসুদুল হাসান, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডল আসাদ, রংপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোঃ শাহানুর আলম পাটোয়ারী এবং তাজহাট থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলামসহ আরও অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মামলা দায়েরের পর বলা হয়েছে, “শিক্ষার্থীদের ওপর সংঘটিত বর্বরোচিত ও পূর্বপরিকল্পিত হামলার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই আমরা এই মামলা করেছি। হামলায় একজন শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্ত করা উচিত।”
এই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি দেশের শিক্ষা ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমাজ ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। দীর্ঘ সময় পর মামলা দায়ের হওয়ায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন। তবে অভিযুক্তদের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের কারণে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিয়ে অনেকের মনে এখনো শঙ্কা বিদ্যমান।
বেরোবিতে ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, তদন্ত প্রক্রিয়া কত দ্রুত ও निष्पक्षভাবে সম্পন্ন হয় এবং নিহত শিক্ষার্থী ও আহতদের পরিবার ন্যায়বিচার পায় কিনা। এই মামলা দেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি বড় পরীক্ষা হিসেবেও পরিগণিত হচ্ছে।
এই কাঠামো অনুসরণ করে সংবাদটি একটি সুস্পষ্ট এবং তথ্যপূর্ণ রূপ ধারণ করেছে। এখানে ঘটনার মূল বিষয়, পটভূমি, অভিযুক্তদের তালিকা, প্রশাসনের বক্তব্য এবং ঘটনার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।