সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোরে কু প্রস্তাবে রাজি না হওয়া ও জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর এক পরিবার কে এক বছর ধরে একঘরে বা সমাজচ্যুত করে রেখেছেন মোড়ল জসেপ সরেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়ন ইউপির মোহাম্মাদপুর তালঠি পল্লী তে ঘটে রয়েছে এমন অমানবিক ঘটনা। এঘটনায় ভুক্তভোগী সমাজচ্যুত রবি কিস্কু বাদি হয়ে মোড়ল জসেপ সরেনকে বিবাদী করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের দিকে নির্বাহীর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। এর আগে মোড়লকে বিবাদী করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন রবি কিস্কু। কিন্তু কোন প্রতিকার পান নি। এতে করে সমাজচ্যুত পরিবারটি চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে।
রবি কিস্কু অভিযোগে উল্লেখ করেন, বিগত ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ২৪ তারিখে রঞ্জিত ও কর্নেলের সাথে খাস সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছিল। বিরোধ বা দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে সুষ্ঠু সমাধান করে দেন। সমাধান করার পরও আক্রোশ মুলুক ভাবে রঞ্জিত ও কর্নেলের পক্ষ নিয়ে মোড়ল জসেপ সরেন একঘরে সমাজচ্যুত করেন। এমন কি গ্রামের দোকান থেকে কোন বাজার সদা করতে পারিনা। গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলা তো দূরে থাক কারো সাথে মেলামেশা করা নিষেধ। করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। ছেলে মেয়েদের সাথে কেউ কথা বলেনা। স্কুলে কারো সাথে যেতে দেয় না।
এদিকে বিগত ২০২৪ ইং সালের মার্চ মাসের ৩ তারিখে থানায় অভিযোগ দেন রবি কিস্কুর স্ত্রী জুলিতা মুরমু। তিনি অভিযোগে মোড়ল জসেপ সরেন, চিমন্ত কিস্কু ও সুখেন হাসদাকে বিবাদী করে অভিযোগ টি দেন। অভিযোগে জুলিতা মুরমু উল্লেখ করেন, সাংসারিক অভাবের কারনে আমার স্বামী তিন মাস আগে ঢাকার মানিকগঞ্জে ইট ভাটার কাজ করতে যান। এসুযোগে বিবাদীরা নেশা করে আমাকে কু প্রস্তাব দেয়। গত ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখে আনুমানিক রাত্রি ১০ টার দিকে প্রলোভন দিয়ে গ্রামের ক্লাব ঘরে ডাকে। ডেকে ইজ্জত নেওয়ার চেষ্টা করে।কিন্তু না পেরে বিবাদীরা হুমকি দিয়ে বলে আমাদের প্রস্তাবে রাজি হলিনা তোর পরিবারকে একঘরে সমাজচ্যুত করে রাখা হবে। আরো উল্লেখ, বিবাদীরা নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়ে পা ধরে মাফ চাইতে বলে।
জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে জুলিতা মুরমু থানায় অভিযোগ দেন। সেখানে বলেন, বিবাদী রঞ্জিত ও কর্নেল মোহাম্মদপুর মৌজার অন্তর্গত আরএস ১ নম্বর খাস খতিয়ান ভুক্ত আরএস ১৫০ দাগে ৩ শতাংশ জমি রয়েছে, রকম দেয়া আছে বাড়ি। এই জায়গাটি জুলিতা মুরমুর পরিবার দেশ স্বাধীনের পর থেকে ভোগ দখল করছে। ওই জায়গায় বাঁশের বেড়া টিনের ছাউনি সহ সব কিছু ভাংচুর করে।
ভুক্তভোগী রবি কিস্কু ও স্ত্রী জুলিতা মুরমু জানান, ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বিচার হয়। বিচারে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে সমাজের লোকজনকে খাওয়াতে বলে। আমি বিচারকের কথামত মোড়লসহ পাড়ার প্রধান দের ১৫ হাজার টাকা দিই খাওয়ানোর জন্য। কিন্তু তারা আমার খৈলানে খাওয়া দাওয়া করবে। আমি অন্য জায়গায় খাওয়ার জন্য অনুরোধ করি। পরে তারা টাকা ফেরত দেয়। আমার ছেলে মেয়েকে কারো সাথে কথা বলতে পারেনা। মাঠে একদিন ফুলবল খেলছিল। সেটা দেখে মোড়ল তাড়িয়ে দেয়। আমার ছেলে কান্না করতে করতে বাড়িতে চলে আসে। ধর্মীয় কাজও করতে দেয় না। কারো সাথে কাজ করতে পারিনা। চরম মানবেতর জীবন যাপন করছি। মেম্বার ও চেয়ারম্যান সবকিছু জানে।
৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মেম্বার গাফফারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি এসবের তেমন কিছু জানিনা। তবে শুনেছি। আপনি জনপ্রতিনিধি সমাজচ্যুত করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার কথা কেউ শুনেনা।
পাঁচন্দর ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল মতিনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি শুনেছি জমি জমা নিয়ে বিরোধ বা মামলার কথা । এর বেশি কিছু বলতে পারবনা।
থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আফজাল হোসেন জানান, একঘরে বা সমাজচ্যুত করে রাখার কোন অধিকার নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিয়াকত সালমান জানান, এবিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply