নিউজ ডেস্ক :
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসে গত সাড়ে পাঁচ বছর প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে আছেন হেলাল উদ্দিন। এর মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত, স্বজনপ্রীতি,শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের তিন বছর পরপর বদলির নিয়ম থাকলেও হেলাল উদ্দিন তার পদে এখনও বহাল আছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এ এলাকার তৎকালীন এমপি ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ঘনিষ্ঠ লোক হওয়ার সুবাদে হেলাল উদ্দিনকে কেউ বদলির সাহস দেখাননি। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অবশ্য হেলাল উদ্দিন নিজেকে জামায়াতের সমর্থক দাবি করে ভোল পাল্টে ফেলেন। এর মধ্যেই তিনি কয়েকজন নিরীহ শিক্ষকের ওপর নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে হেলাল উদ্দিনের বেশ কিছু অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। যদিও হেলাল উদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অসত্য ও ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হেলাল উদ্দিন ২০২০-২১ অর্থবছরে মোটরসাইকেলের পেট্রোল খরচ বাবদ তার জন্য বরাদ্দ প্রতি মাসে এক হাজার করে ১২ মাসে ১২ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪২ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। যার বিল নম্বর ১৪। একই অর্থবছরে নিজের মোটরসাইকেল মেরামতের জন্য দুই হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তিনি নয় হাজার টাকা উত্তোলন করেন। ২০২১-২২ অর্থবছরেও মোটরসাইকেলের পেট্রোল খরচ বাবদ হেলাল উদ্দিন ৪২ হাজার টাকা তুলে নেন। মোটরসাইকেল মেরামতের জন্য তোলেন সাত হাজার টাকা। একই অর্থবছর চরকাবারীখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছোটখাটো মেরামত বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থ বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে না রেখে নিজ নামের অ্যাকাউন্টে রাখেন। এ ছাড়া কোনো কাজ না করেই কয়েকটি ক্রয়সংক্রান্ত বিষয়ে এক লাখ ৮৯ হাজার টাকা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাত করেছেন।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোটরসাইকেল মেরামতের জন্য নয় হাজার ছয় শ’ টাকা বরাদ্দ থাকলেও তিনি উত্তোলন করেন ১৯ হাজার দুই শ’ টাকা। পেট্রোল খরচ বাবদ তুলে নেন ১৬ হাজার টাকা। এসব টাকা উত্তোলনের প্রমাণপত্র আমাদের হাতে আছে।
অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, একই বছর শিক্ষকদের ভ্রমণ ভাতার এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে তুলে নেওয়ারও প্রমাণ মেলে হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের ১৩ তম গ্রেডের ৫০ হাজার টাকার বকেয়া বিলও তুলে নেন তিনি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবার শিক্ষকদের ভ্রমণ ভাতার তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে তুলে নেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পরিত্যক্ত ভবন, পুরোনো আসবাব ও অন্যান্য সামগ্রী দরপত্র আহ্বান করে বিক্রির মাধ্যমে সে টাকা আত্মসাৎ করেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে অফিসের পুরোনো আইপিএস ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাঁথিয়ার সাবেক ইউএনও জাহিদুল ইসলাম শামীমের সাথে যোগসাজস করে প্রাথমিক বিদ্যালগুলোতে জোরজবরদস্তি করে বিভিন্ন নিম্নমানের বই বিক্রি করে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছেন তিনি। যে সকল স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার চাপিয়ে দেয়া বই নেননি তিনি সে সকল প্রধান শিক্ষককে বিভিন্ন অজুহাতে শো ক’জ করে নানাভাবে হয়রানি,দমন,পীড়ন চালিয়ে আসছেন।
সাঁথিয়া উপজেলায় কর্মরত কয়েকজন প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিন বছর পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের একই কর্মস্থলে থাকার বিধান থাকলেও তিনি অদৃশ্য খুঁটির জোরে ও রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাব খাটিয়ে সাড়ে পাঁচ বছর ধরে সাঁথিয়া উপজেলায় অন্যায় আখের গোছাতে কর্মরত রয়েছেন। তার এহেন কর্মকান্ডে শিক্ষকদের জীবন দুর্বিষহ ও অসহনীয় হয়ে উঠেছে। কোনো শিক্ষক এসব অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করলেই তার ওপর তিনি নানাভাবে হয়রানি, শো-কজ কিংবা পরিদর্শনের নামে ভিজিট করে হয়রানি করছেন যা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের অন্তরায় বলে জানান কয়েকজন প্রধান শিক্ষক। ওই শিক্ষকরা হেলাল উদ্দিনের অন্যত্র দ্রুত বদলিসহ শাস্তি দাবি করেন।
হেলাল উদ্দিনের বিষয়ে কথা বলতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল কবীরকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিডি) সানা উল্লাহর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকেও পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। কিছু শিক্ষক অবৈধ ফায়দা হাসিল করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে চলেছে। আমি ন্যায় ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছি।
বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ টাকার চেয়ে বেশি উত্তোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মোটরসাইকেলের পেট্রোল, মেরামতসহ কিছু খাতে বরাদ্দ টাকার বেশি তুলে আমি নিজের কাছে রেখেছিলাম। তবে সে টাকা পরে আমি সঠিক খাতেই খরচ করেছি।
Leave a Reply