সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধি:
একটি দুর্ঘটনা নবম শ্রেণির ছাত্র আরিফুলের জীবনের সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নীচ পলাশী ফতেপুর গ্রামে। নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব বাবা কোহিনূর শেখ পদ্মা নদীতে মাছ ধরার পাশাপাশি চরের জমি বর্গা নিয়ে কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। কয়েক বছর আগে নিজের সাত বিঘা জমি বিলীন হয়ে গেছে পদ্মায়। প্রবাসী এক আত্মীয়ের নিকট থেকে টাকা ধার করে কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে ৩/৪টি করে গরু পালতেন। গরু বিক্রি টাকা শোধ করার পর যা লাভ হতো তা সংসারের কাজে লাগাতেন।
কোহিনূর শেখ দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। নবম শ্রেণি পড়ুয়া একমাত্র ছেলে আরিফুলকে সাথে নিয়ে আরো কয়েকজনের সাথে তার তিনটি গরু বিক্রির জন্য ট্রাকে করে গত ৩১ মে রাতে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। স্থানীয়ভাবে ব্যাপারীদের নিকট গরু বিক্রি করলে টাকা বাকি রেখে সময়মতো টাকা তুলতে না পারতেন না। এ কারণেই কয়েক বছর থেকে ঢাকার বছিলা হাটে গরু নিয়ে যেতেন কোহিনূর শেখ। গত ১ জুন রাত সোয়া একটার দিকে তাঁদের ট্রাকটি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার দেওহাটা এলাকায় থামানো হয়। এমন সময় একটি সবজিবোঝাই ট্রাক এসে ধাক্কা দেয়। এতে গরুর সাথে দাঁড়িয়ে থাকা কোহিনূর শেখ গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
সঙ্গে থাকা ব্যবসায়ীদের হাতে গরু রেখে বাবার লাশ নিয়ে রাজশাহী ফিরে যায় আরিফুল। লাশ দাফন করে, পরদিন আবার ঢাকায় ছুটতে হয় গরু তিনটি বিক্রির জন্য। ৪ জুন সকালে বছিলা হাটে আরিফুলকে দেখা যায়। গরুর গলা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে বাবা নেই। তার দিশাহারা চোখ দুটির দিকে তাকালেই বোঝা যায়, নবম শ্রেণির ছাত্রটির কাঁধে হঠাৎই পুরো সংসারের বোঝা এসে পড়েছে। বাবা কোহিনূর শেখ সাড়ে চার বিঘা জমি বর্গা নিয়ে এবছর পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় প্রায় তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। সব ঋণের টাকা। ঋণ শোধ করতে হলে গরু তিনটি বিক্রি করতেই হবে। তবে ৪ জুন পর্যন্ত ক্রেতারা কাঙ্খিত দাম না বলায় আরিফুলের একটি গরুও বিক্রি হয়নি।
Leave a Reply