বিশেষ প্রতিনিধি
চট্টগ্রামে ঠিকাদার সমিতির দ্বিমুখী অবস্থান নিয়ে সচেতন মহল জনমনে প্রশ্ন, তদন্ত ব্যাহত করতে নারী সাংবাদিককে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ। এ যেন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। কলোকে সাদা করার অপচেষ্টা। বলা যায় একই পটে যেন দুই রঙের খেলা।
জহির রায়হানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন প্রতিবাদ শাস্তির দাবি উঠে সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে। যে সাংবাদিক থলের বিড়াল উন্মোচনে সত্য বস্তুনিষ্ঠ তথ্যে দুর্নীতি অনিয়মের সংবাদ প্রকাশে আপসহীন। সৎ পথে থাকার কারণেই উল্টো তার বিরুদ্ধেই চালায় অপপ্রচার। পেশাগত কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ ও সমালোচিত করতে মরিয়া অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি আমলা ও ঠিকাদার সিন্ডিকেটের। পরে ঐ নারী সাংবাদিককেই করে টার্গেট। ভুক্তভোগী সাংবাদিক
হুমকি ও মানহানিকর আচরণে প্রশাসনকে অভিযোগ
করেছেন।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির রায়হানের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার টেন্ডারবিহীন কাজ ও দুর্নীতির অভিযোগে যখন তদন্ত চলছে, তখন তদন্তকে ভিন্ন খাতে নিতে নারী সাংবাদিককে টার্গেট করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার সমিতির বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, ১১ মে ২০২৫ চট্টগ্রামে ঠিকাদার সমিতির নেতারা সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করে জহির রায়হানের অপসারণ দাবিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলে। এ বিষয়ে দেশের একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সময় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের নারী সাংবাদিক আফসানা নূর নওশীন বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু করেন।
তবে অভিযোগ রয়েছে, মানববন্ধনের পরদিনই ঠিকাদার সমিতির একটি অংশ জহির রায়হানের সাথে সমঝোতায় গিয়ে অবস্থান পরিবর্তন করে। পরে সমিতির প্যাড ব্যবহার করে সাংবাদিক নওশীনের বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে চিঠি প্রকাশ করে। শুধু তাই নয়, তাকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হেনস্তার অভিযোগও উঠেছে।
বিশেষ সূত্রে আরও জানা গেছে, জহির রায়হানকে ‘সৎ ও ভালো মানুষ’ প্রমাণ করতে ঠিকাদার সমিতিরই একটি অংশ নারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে সমিতির ভূমিকা নিয়ে:
সাংবাদিক ও পেশাজীবী মহলের প্রশ্ন, ঠিকাদার সমিতির কাজ কি প্রকৌশলীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, নাকি উল্টো সাংবাদিককে হেয় করা? একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, “যেদিন ঠিকাদার সমিতি জহির রায়হানের অপসারণ দাবি করে মানববন্ধন করেছে, পরদিন তারাই উল্টো সাংবাদিককে টার্গেট করেছে। এটা স্পষ্ট দ্বিমুখী নীতি।”
সাংবাদিক নেতাদের ভাষ্য, একজন পেশাদার নারী সাংবাদিককে এভাবে টার্গেট করা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নারীর মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। তাদের মতে, “ঠিকাদার সমিতির দায়িত্ব সঠিক টেন্ডার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা, কোনো সাংবাদিককে আক্রমণ করা তাদের এখতিয়ার নয়।”
আইনি পদক্ষেপের ইঙ্গিত:
নারী সাংবাদিক আফসানা নূর নওশীন জানিয়েছেন, তিনি এ ঘটনায় আইনি নোটিশ, প্রেস কাউন্সিল ও মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এরই মধ্যে ২৭/০৬/২০২৫ তারিখে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার কোতোয়ালী থানায় নারী সাংবাদিক আফসানা নূর নওশীন ‘বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতি চট্টগ্রাম জোন’-এর সভাপতি আবদুল্লাহ আল টিটু ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহফুজুল হকের বিরুদ্ধে হুমকি ও মানহানিকর আচরণ করায় অভিযোগ করেছেন।
চট্টগ্রামের সাংবাদিক সংগঠনগুলো এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে প্রকৌশলী জহির রায়হানের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে সাংবাদিককে টার্গেট করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পেশাজীবী মহল।