সিদ্দিকুর রহমান, বেরোবি প্রতিনিধি:
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) সম্প্রতি ‘মুলা চাষ’ শব্দটি একটি সাধারণ সবজি নাম নয়; এটি এখন হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের হতাশা, ক্ষোভ এবং প্রতিবাদের এক শক্তিশালী প্রতীক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অকার্যকর কর্মকাণ্ড এবং প্রশাসনের দেওয়া আশ্বাসগুলো যখন আলোর মুখ দেখছে না, তখন শিক্ষার্থীরা সেগুলোকে ‘মুলা’ হিসেবে ব্যঙ্গ করছে। এটি কোনো কৃষি প্রকল্প নয়, বরং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের কৌতুক এবং সমালোচনার এক নতুন ভাষা।
মুলা ১: স্বপ্নের ড্রোন শো, বাস্তবতায় অন্ধকার
গত ১৬ জুলাই শহীদ দিবসে ১১শ ড্রোন উড়িয়ে এক জমকালো শো আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হলেও, শেষ পর্যন্ত ‘অদৃশ্য’ কোনো কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিজয় দিবসে শোটি হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও, সেটিও পূরণ হয়নি। ড্রোন শো তো দূরের কথা, কোনো আলোকসজ্জাও করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা এই ব্যর্থতাকে ‘মুলা ঝুলানো’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
মুলা ২: হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অজানা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ হলেও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছে যে, এর কোনো সুফল তারা পাচ্ছে না। শ্রেণিকক্ষ, আবাসন, কিংবা গবেষণার পরিবেশ—কোনোটিরই দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। শিক্ষার্থীদের মতে, কোটি কোটি টাকার এই উন্নয়ন প্রকল্পের আলোচনা কেবল কথার কথা, যা তাদের জন্য আরেকটি বড় ‘মুলা’র মতো।
মুলা ৩: তদন্ত কমিটি মানেই সময়ক্ষেপণ
যৌন হয়রানি, অনিয়ম, বা স্বজনপ্রীতির মতো গুরুতর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় না, বা কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। যদিও সম্প্রতি একজন শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু একই ধরনের আরেকটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেই প্রশাসন তার দায় সেরেছে। শিক্ষার্থীরা তাই মনে করে, তদন্ত কমিটি মানেই সময় নষ্ট আর প্রশাসন তাদের হাতে ধরিয়ে দেয় আরেকটি ‘মুলা’।
মুলা ৪: নিষিদ্ধ ছাত্ররাজনীতি ও নিষ্ক্রিয় ছাত্র সংসদ
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের কোনো কার্যকর প্ল্যাটফর্ম নেই। ছাত্র সংসদ নেই, ফলে তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগও সীমিত। এর মধ্যেই একজন সিন্ডিকেট সদস্য হয়েও প্রক্টরের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে খেলার উদ্বোধন করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এটি প্রশাসনের দ্বৈত নীতির প্রমাণ, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশার জন্ম দিয়েছে।
মুলা ৫: বাসের আশ্বাস, বাস্তবে অনিশ্চয়তা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বাস ভাড়া নেওয়ার কথা থাকলেও এখনো কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। শিক্ষার্থীরা জানে না কবে বাস চালু হবে, কোন রুটে চলবে—এসব বিষয়ে কোনো স্বচ্ছতা নেই। বাস চালুর এই প্রতিশ্রুতিও যেন তাদের কাছে একটি ‘মুলা’ ছাড়া আর কিছু নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মুলা চাষ’ এখন ট্রেন্ড
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ‘মুলা চাষ’ এখন একটি ভাইরাল বিষয়। শিক্ষার্থীরা মিম, ভিডিও এবং ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে প্রশাসনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড নিয়ে ট্রল করছে। তাদের কাছে ‘মুলা চাষ’ এখন আর শুধু একটি সবজি নয়, এটি তাদের হতাশার, কৌতুকের এবং প্রতিরোধের এক নতুন ভাষা। যখন প্রশ্নের জবাব মেলে না, তখন প্রতীকই হয়ে ওঠে প্রতিবাদের সবচেয়ে জোরালো হাতিয়ার।
Leave a Reply