নড়াইল প্রতিনিধিঃ নড়াইলে
হামলা মিথ্যা মামলা ও হুমকির মুখে নড়াইল সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড চর শালিখা গ্রামে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নারী ও শিশুরা। কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।পুরুষ শুন্য হয়ে পড়া পরিবারগুলো চরম নিরাপত্তা হীনতায় ভূগছে। অব্যাহত হামলা ও হুমকি দেওয়ার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এতে মশিয়ার গ্রুপ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।চর শালিখা বাজারের তিনরাস্তার মাথায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছে মশিয়ার গ্রুপের লোকজন।মশিয়ার গ্রুপের আতঙ্কে কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছেনা।প্রতিপক্ষের ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
এ অবস্থায় যে কোন সময় বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে , গত দুই মাস আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মশিয়ার গ্রুপের নবীর( ৫৫) ও মুরাদ ( ৩৫) শেখ রাতের আধারে প্রবাসীর স্ত্রী কমলা বেগমে (৩৫) এর বাড়িতে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা দিতে না চাইলে মুরাদ ও নবীর শেখ প্রবাসীর স্ত্রী কমলা বেগম, তার তিন সন্তান ও দেবর তারিকুল ইসলাম কে বেধরক মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
এই ঘটনায় কমলা বেগম নড়াইল সদর থানায় আর্মি ক্যাম্পে মুরাদ ও নবীর শেখ সহ ১০/১২ জনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দেন।
এবং ন্যায় বিচার পাওয়ার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করে।
এর জের ধরে মশিয়ার, নবীর ও মুরাদ শেখ এলাকায় আজিজার শেখ গ্রুপের লোকদের হত্যা, বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের হুমকি দেয়।
জীবন বাঁচানোর তাগিদে আজিজার শেখ (৬০)সমর্থকরা এলাকা ছাড়া হন।
চলতি মাসে পুলিশ, রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলের মধ্যস্থতায় আপোষ-মীমাংসার পর আজিজার শেখ সমর্থিত লোকজন গ্রামে ফেরেন।
গত ১৫ আগস্ট সদরের সীতারামপুর ব্রিজের ওপর মশিয়ার গ্রুপের মুরাদ শেখকে নিজেদের অভ্যান্তরিন দ্বন্দে কে বা কারা কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এই হামলার ঘটনায় মশিয়ার গ্রুপের উজ্জল শেখ বাদী হয়ে গত ১৭ ই আগস্ট আজিজার গ্রুপের ২২ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামী করে নড়াইল সদর থানায় একটি মামলা করেন।
এর পরদিন মশিয়ার গ্রুপের সদস্য মুরাদের উপর হামলাকে পুঁজি করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষ আজিজার গ্রুপের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। বাড়ি ঘর ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাট করে। এসময় পাল্টা আক্রমণে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নারীসহ ৩০ জন আহত হয়।
এই সংঘর্ষে মশিয়ার গ্রুপের লোকজনের হামলার স্বীকার মিনা বেগমে (৪৫) এর অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় তাকে নড়াইল সদর হাসপাতাল থেকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।তার অবস্থা আশংকাজনক।
পরবর্তীতে মারামারির ঘটনায় নড়াইল সদর থানায় মামলা হলে গ্রেফতার আতংকে গ্রাম ছাড়া হয়ে যায় আজিজার শেখের সমর্থকরা। এই সুযোগে মশিয়ার গ্রুপের লোকজন প্রতিপক্ষের কমলা বেগম, তরিকুল ইসলাম, আলী মিয়া,সিহাব,চান মিয়া,চিলু, বিলু, মিরফুল,উজ্জল,সোহেল,শামিম,রাসেল, রবিউল, আক্তার,জসিম, রুবায়েলসহ ১৬ টি বাড়িতে হামলা ভাংচুর চালায় বলে অভিযোগ করেন আজিজার শেখের সমর্থকের পরিবারের নারী সদস্যরা।
বুধবার (২০ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের একাধিক দোকান ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। একটি দোকানের টিনের বেড়া চৌচির হয়ে আছে, ভেতরে ভাঙা ফ্রিজ, টিভি ও আলমারি পড়ে আছে এলোমেলো। রান্নাঘরের হাড়ি-পাতিলও রক্ষা পায়নি।
চর শালিখা গ্রামের জসীমের স্ত্রী রিয়া বেগম বলেন,"পরিবারের পুরুষ সদস্যরা হাট বাজারে ছিল। তারা ঘরের ভিতর ডুকে যা নিয়ে যাওয়ার তা নিছে। টাকা পয়সা যা ছিল নিয়ে গেছে আর ভাংচুর করে রেখে গেছে। ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকার কোন পরিবেশ নাই।রাত হলে তো বাড়ি থাকতেই পারি না। দিনের বেলায় একটু ঘুরে বেড়ায়। আর রাত হলে এখান থেকে সেখানে পলায় বেড়ায়। এই গ্রামে থাকার আর কোন পরিবেশ নেই। "
ক্ষতিগ্রস্ত রোকেয়া বেগম জানান, “মশিয়ারের গ্রুপ এক হয়ে এসে আমার ছেলেটার দোকান ভাংচুর করেছে। আমার ছেলে নিরপেক্ষ, সে কোন গ্রুপের সাথে নেই।
তার দোকানে পাঁচ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে। আমার একটা জা ছিল। সে ঠেকাতে গিয়েছিল তাকে কুপায় কাটে ফেলেছে। আমার বংশের কারো কিছু নাই। আমাদের রাস্তা ঘাটে উঠতে দিচ্ছে না। প্রতিপক্ষের লোকজন সব সময় রাস্তায় থাকছে। আমাদের দাবড়ায়ে উঠায় দিচ্ছে।
এ বিষয়ে মশিয়ার শেখের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে চর শালিখা গ্রামে পাওয়া যায়নি।
নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, চরশালিখা গ্রামের হামলার ঘঠনায় দুই পক্ষ দুইটি মামলা করেছেন।তবে বাড়ি ঘর ভাংচুর বিষয় কোন অভিযোগ করা হয়নি।অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।