রাসেল ইসলাম, লালমনিরহাটঃ
দরপত্র প্রক্রিয়াধিন থাকা সড়ক সংস্কারকাজ দখল নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিক দলের কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ মামলায় দৈনিক আজকের পত্রিকা ও বাংলানিউজের লালমনিরহাট প্রতিনিধি খোরশেদ আলম সাগরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) লালমনিরহাট রেলওয়ে শ্রমিকদলের সহ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃবৃন্দ তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি) লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ও চলবলা ইউনিয়নের দুটি সড়ক সংস্কারকাজের দরপত্র আহবান করে। চন্দ্রপুরে মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড এবং চলবলায় বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন লিমিটেড কাজ বাস্তাবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে মনোনীত হয়। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটি পারফরমেন্স সিকিউরিটি বা কার্যসম্পাদন জামানত জমা দিয়েছে। এখন চুক্তিপত্র তৈরি সাপেক্ষে বাস্তবায়নকারী দপ্তর কার্যাদেশ দিলে কাজ শুরুর কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটির।
এরই মধ্যে গত আগস্ট মাসের প্রথম দিকে স্থানীয় বিএনপি’র নেতারা কার্যাদেশ ছাড়াই সড়ক খুড়া শুরু করেন। যার প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদাররা বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এলজিইডি লালমনিরহাট ও কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যার প্রেক্ষিতে আজকের পত্রিকায় “সড়ক সংস্কারকাজ দখল” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। যার কারনে সাংবাদিক খোরশেদ আলম সাগরের প্রতি ক্ষেপে যান বিএনপি নেতারা।
গত ২৩ সালে লালমনিরহাট শ্রমিকদলের কার্যালয় ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। সে ঘটনায় শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) লালমনিরহাট সদর থানায় ১৯ জনের নামসহ অজ্ঞাত এক/দেড়শত জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন শ্রমিকদল নেতা ফরিদুল ইসলাম। সে মামলায় অভিযোগকারী ঠিকাদার ইলাহী বকসকে ৩ নং, তার ছেলে শামছুল আলমকে ৪ নং ও অপর ঠিকাদার শাহ আযম নয়নকে ৫ নং এবং সংবাদ প্রকাশকারী সাংবাদিক খোরশেদ আলম সাগরকে ৬ নং আসামী করা হয়েছে।
এ মামলায় ঠিকাদার এলাহী বকস ও তার ছেলেকে শুক্রবার দিনগত মধ্যরাতে কালীগঞ্জের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলিশ। এ মামলার অপর ঠিকাদার শাহ আযম নয়নের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালালেও গ্রেপ্তার করতে পারিনি। এ মামলায় সাংবাদিককে আসামী করায় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে সাংবাদিক সংগঠন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনে।
এ মামলার বাদি ফরিদুল ইসলাম বলেন, মামলার আবেদন করা হয়েছে। কাকে গ্রেপ্তার করছে কি না জানি না। এর বাহিরে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।
এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী আহমেদ আবু জাফর বলেছেন, কোনো ধরনের পুলিশি তদন্ত ছাড়া একজন পেশাদার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। ২০২৩ সালে একটি রাজনৈতিক দলের অফিস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০২৫ সালে এসে সাংবাদিক ও কিছু ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা চূড়ান্তভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি অবিলম্বে সাংবাদিক খোরশেদ আলমকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানান। অন্যথায়, সারা দেশে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন তিনি।
লালমনিরহাট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলু এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই সাংবাদিকরা সবসময় সাহসের সঙ্গে সত্যের পক্ষে থাকুক। আমাদের দল সবসময় সাংবাদিকদের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা অবিলম্বে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি এবং একই সাথে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, কোনো ঠিকাদার যদি কাজ করতে যায়, সেখানে যদি কেউ দখলদারিত্ব করে, কেউ বাঁধা দিতে চায় তাহলে তারা কেউ জনগণের কথা চিন্তা করে না। পাশাপাশি সেই ঠিকাদারের নামে যদি মামলা করা হয়, আবার সেই ঘটনার নিউজ করলে সাংবাদিকদের মামলায় জড়ানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। পাশাপাশি এ ঘটনায় প্রশাসনেরও ব্যর্থতা রয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
প্রেসক্লাব লালমনিরহাটের আহবায়ক আনোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করার অপচেষ্টার এ মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দ্রুত এ মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় জেলার ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসুচি গ্রহনে বাধ্য হবে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরন্নবী বলেন, এ মামলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবাদিকের নাম রয়েছে তা মামলা হওয়ার পরে জানতে পেয়েছি। তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply