সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধি:
দেশে প্রথমবারের মতো শুধু সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত একটি ওয়ার্ড চালু করেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। সাপে কাটায় মৃত্যুহার কমানো ও দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বৃহস্পতিবার হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদের উদ্বোধনের মাধ্যমে ১২ শয্যার হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) মানের এই বিশেষ ওয়ার্ডটি চালু হয়। পুরোনো ক্যানটিনের জায়গায় নির্মিত এই ইউনিটে আটজন পুরুষ ও চারজন নারী রোগীর জন্য পৃথক শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে ওয়ার্ডের বাইরেও রোগীদের সেবা দেওয়া হবে।
ওয়ার্ডের ফোকাল পারসন হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু শাহীন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তিনি বর্তমানে রাসেলস ভাইপার সাপের বিষ নিয়ে পিএইচডি করছেন।
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রামেকে ১ হাজার ২০৫ জন সাপে কাটা রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২৬০ জন বিষধর সাপের কামড়ে আক্রান্ত ছিলেন এবং ৩০ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ১০ জন রাসেলস ভাইপারের কামড়ে, বাকিরা কালাচ, কেউটে ও গোখরার কামড়ে মারা যান।
ডা. আবু শাহীন জানান, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মৃত্যুহার ছিল ২৭ শতাংশ, যা এখন চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির কারণে অনেক কমেছে। নতুন ওয়ার্ডে সমন্বিত চিকিৎসা, সার্বক্ষণিক চিকিৎসক-নার্স, পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম ও দ্রুত সেবা নিশ্চিত হওয়ায় মৃত্যুহার আরও কমবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি অ্যান্টিভেনম ডোজের মূল্য প্রায় ১৩ হাজার টাকা। এক ডোজে ১০টি ভায়াল লাগে এবং অনেক রোগীর ক্ষেত্রে একাধিক ডোজ প্রয়োজন হয়। তবুও রোগীরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এসব চিকিৎসা ও ওষুধ পাবেন। রোগী আসার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু হবে, এক মিনিটও দেরি করা হবে না।
হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহাম্মদ বলেন, “আগে সাপে কাটা রোগীদের বড় ওয়ার্ডের এক কোণায় চিকিৎসা হতো। অনেক সময় দেরিতেও হাসপাতালে আসতেন। এখন আলাদা ওয়ার্ড থাকায় দ্রুত এবং মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল ইমার্জেন্সি ইউনিট, যেখানে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক ও নার্স উপস্থিত থাকবেন।”
Leave a Reply