
নিজস্ব প্রতিবেদক
তিস্তাপারের মানুষ বছরের পর বছর নদীভাঙন, দারিদ্র্য আর পানিশূন্যতার অভিশাপে জর্জরিত। কৃষি, জীবিকা ও বসতভিটা হারিয়ে তারা আজ বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ক্লান্ত। সেই তিস্তাপারের আহাজারি এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে—তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গড়ে উঠেছে এক জাতীয় জাগরণ।
রবিবার রাজধানীর নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে এই দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করে রংপুর বিভাগ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী হাতে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে এক কণ্ঠে উচ্চারণ করেন—
“তিস্তা বাঁচাও, উত্তরবঙ্গ বাঁচাও, বাংলাদেশ বাঁচাও।”
সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মো. ইয়াছির আরাফাত এবং সঞ্চালনা করেন সম্পাদক রায়হান কবির।
সভাপতি ইয়াছির আরাফাত বলেন,
> “তিস্তাপারের মানুষ বছরের পর বছর রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির অপেক্ষায় আছে। তারা শুধু পানি চায় না, চায় বেঁচে থাকার অধিকার। এখনই সময় দৃঢ় কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের।”
সঞ্চালক রায়হান কবির বলেন,
“তিস্তাপারের কান্না আজ গোটা জাতির কান্না। তরুণ প্রজন্ম এই আন্দোলনের নেতৃত্ব নিচ্ছে, কারণ তিস্তা বাঁচানো মানে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বাঁচানো।”

সহসম্পাদক তানভীর আনাম বলেন,
> “ভাঙন, ক্ষুধা ও বেকারত্বে তিস্তাপারের মানুষ আজ দিশাহারা। অথচ এই নদী একসময় ছিল তাদের জীবনের উৎস।”
ফার্মেসি বিভাগের প্রতিনিধি শফিউল্লাহ বলেন,
> “আন্তর্জাতিক পানিবণ্টন চুক্তি উপেক্ষা করে ভারত একতরফাভাবে তিস্তায় পানি প্রত্যাহার করছে। এটি মানবতারও অপমান।”
শিক্ষার্থী মেহরাব হোসেন বলেন,
> “স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করেনি। এই প্রজন্মই তিস্তা মুক্তির ইতিহাস লিখবে।”
বক্তারা বলেন, তিস্তাপারের শিশুর চোখে আজ অনিশ্চয়তা, নারীর মনে ভয়। শুকনো মৌসুমে নদী মৃতপ্রায়, বর্ষায় বন্যার থাবা। তবুও মানুষ বেঁচে আছে আশায়—কোনো একদিন তিস্তা আবার বইবে, প্রাণ ফিরবে উত্তরে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২১ লাখ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসবে। কৃষি উৎপাদন বাড়বে, ভাঙন রোধ হবে, অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হবে।
মানববন্ধনের শেষে শিক্ষার্থীরা শপথ নেন—
“তিস্তাকে আমরা বাঁচাবো, নদীকে আমরা ফিরিয়ে আনবো।”
তিস্তাপারের কান্না আজ আর উত্তরবঙ্গের নয়—এটি পুরো বাংলাদেশের হৃদয়ের স্পন্দন।
তিস্তা বাঁচলে, উত্তরবঙ্গ বাঁচবে; উত্তরবঙ্গ বাঁচলে, বাঁচবে বাংলাদেশ।
Leave a Reply