
সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধি:
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার প্রায় ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল শিক্ষ ব্যবস্থা শুধুই কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। মাঠ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল শিক্ষার বাস্তব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিক্ষার্থীদের তথ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দক্ষতা, সক্ষমতা বাড়ানো ও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ তৈরি করা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলেও বাস্তবে তা এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। নিম্ন মানের উপকরন সরবরাহে এসব ডিজিটাল ল্যাব মুখ থুবরে পড়েছে।
সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, কম্পিউটার প্রশিক্ষন এবং অনলাইনভিত্তিক শিক্ষন পদ্ধতি চালু থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে বেশির ভাগ স্কুলেই নেই পর্যাপ্ত কম্পিউটার, প্রজেক্টর বা ইন্টারনেট সংযোগ। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি বা ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষিত নন। ফলে শিক্ষার্থীরা এখনও বই নির্ভর শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন।গত সোমবার থেকে বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল ল্যাব এ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ল্যাবগুলোর করুন অবস্থা। সরদহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইউসুফপুর কৃষি উচ্চ বিদ্যালয় সরকার প্রদত্ত ল্যাপটপগুলো দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ল্যাপটপগুলো মনিটর ও ব্যাটারির কারনে অচল। ভালো ল্যাপটপগুলো ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করছেন কর্তৃপক্ষ। ঐসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, ল্যাপটপগুলো পুরোনো সংস্করনের এবং অধিকাংশ ল্যাপটপের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ডিজিটাল ক্লাশরুম চালুর জন্য প্রশিক্ষন ও রক্ষানোবেক্ষনের নিয়মিত কোন ব্যবস্থা নেই। চারঘাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায় এখানে স্কুল অফ ফিউচার এর জন্য ২০২২ সালে উপকরন পেয়েছে তা কার্যত বন্ধ। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্কুল অফ ফিউচার এর সরঞ্জামাদি পেয়েছি তবে টেকনেশিয়ান এর জন্য বার বার উপজেলা আইসিটি অধিদপ্তরে আবেদন করে সাড়া মিলেনি। তাই মেশিনগুলো পড়ে আছে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, নিয়মিত তথ্য প্রযুক্তি ক্লাশগুলো প্রজেক্টও এর মাধ্যমে নেয়া হয়। তবে ল্যাব এ গিয়ে ব্যবহারিক ক্লাশ নেয়া হয় না। সরদহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী সেতু আক্তার, একই ক্লাশের তিশা আফরোজ, ইউসুফপুর কৃষি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী শিমলা খাতুন, ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী সুরাইয়া ইয়াসমীনসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বলেন, বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ল্যাব আছে তবে আমরা কোন দিন ল্যাপ টপ ছুয়ে দেখিনি। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে ইউসুফপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, কম্পিউটার ব্যবহারিক শিক্ষা দেয়ার জন্য একজন ল্যাব সহকারী প্রয়োজন। আমি তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রজেক্টর এর মাধ্যমে বই নির্ভর তাত্তি¡ক শিক্ষা দিয়ে থাকি। ল্যাব সহকারী না থাকায় শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মুসহাক আলী জানান, ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে একাধিক নির্দেশনা ও প্রকল্প নেয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে তদারকি ও কারিগরি সহায়তার অভাবে উদ্যোগগুলো সফলতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগন উপকরনের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা (সহকারী প্রগ্রামার) মাহফুজ আরেফিন মুঠোফনে বলেন, ল্যাব পরিদর্শনের প্রতিবেদন উর্দ্ধোতন কর্মকর্তাদের নিকট পাঠিয়েছি।
Leave a Reply