মোহাম্মদ মাসুদ
নির্বাচন গণভোট একসাথেই সরকারের এমন সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম সহ সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ প্রতিবাদ।
মাঠের সক্রিয় রাজনৈতিক দল'সহ ডানপন্থী ও ইসলামিক দলগুলোর আপত্তি অসন্তোষ প্রকাশে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনসহ ৫ দফা দাবি জানান।
জামাতের সূত্রে জানা যায়, গণভোট আর নির্বাচন একসাথে হলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চেতনাকে গুরুত্বহীন জনগণকে বিভ্রান্ত করে দেশে নতুন সংকট বিনির্মাণ হবে। এতে গণ-আন্দোলনকে অবজ্ঞা করে নির্বাচন গণভোট হবে একসাথেই যা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে জনমনে ।
১৪ নভেম্বর, শুক্রবার, আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ উত্তর গেটে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ-সমাবেশে দেশের পরিস্থিতি ও অন্তবর্তীকালীন সরকারের নানা বিষয়ে সমালোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টার জাতির অনাকাঙ্ক্ষিত হঠাৎ এ ঘোষণায় সারাদেশে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন ও গণভোট একসাথে হওয়ায় ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো নানা বিষয়ে সুবিধা অসুবিধায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন নানা ইস্যুতে। শীর্ষ আলোচিত সমালোচিত হয়েছে রাজনৈতিক মহল, সর্বস্তরের জনগণ সারা দেশজুড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই ব্যাপক শোরগোল সারা পড়ে সোশ্যাল মিডিয়া গণমাধ্যম ও দেশ-বিদেশে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এর আদেশ জারির মধ্য দিয়ে এ জুলাই সনদ আইনি ভিত্তি পেল। হঠাৎ কার্যকরী এ সিদ্ধান্তে জনগণ অবাক। রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জনমনে শীর্ষ আলোচিত হয। প্রধান উপদেষ্টার এমন সু-কৌশল পদক্ষেপ সিদ্ধান্তে সংবিধানিক গেজেট প্রণয়নসহ সবকিছুই চূড়ান্ত। যা চমকে দিল সকল রাজনৈতিক দল, কূটনৈতিকবিদ সচেতন মহল ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন!
ঘোষণায় বিএনপি প্রথমে অসন্তোষ হলেও পরে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানাই প্রধান উপদেষ্টাকে।
এদিকে জামায়াতের তীব্র সমালোচনা বিক্ষোভ আপত্তি প্রতিবাদ জানাই। দেশে রাজনৈতিক অনৈক্য বিরোধে অন্তবর্তী কালীন সরকারের উপদেষ্টা ড. ইউনুস'র হঠাৎ ঘোষণা ও একই সাথে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে আইনীবৃত্তিতে
প্রকাশ হলো সংবিধানিক গেজেট।
সারাদেশে বিভিন্নস্থানে জামায়াতের বিক্ষোভে আন্দোলনের প্রতিবাদে আপত্তি তোলেন। একই দিনে গণভোটের ঘোষণা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে অবজ্ঞার শামিল। রাজনৈতিক ভিন্নমত বহু আলোচনা সমালোচনার মধ্য দিয়ে দেশে নির্বাচন ইতিহাসে নতুন সিদ্ধান্তে ডক্টর ইউনুসের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ঘোষণায় নির্বাচন ইতিহাসে নতুন চমক!
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, জুলাই চেতনায় অন্তর্ভুক্তিকালীন সরকারের প্রধান তিনটি দায়িত্ব সফল সুশৃংখল সক্রিয়তায় দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম দায়িত্ব গণহত্যা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের অপরাধীদের বিচার, সরকার ও স্থানীয় সরকারি সকল দপ্তরে সংস্কার ও নির্বাচন সম্পূর্ণ করবেন। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে নির্বাচন আর গণভোট হবে একসাথেই।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, রক্তাক্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায়। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের একই দিনে গণভোট আয়োজনের সরকারি সিদ্ধান্ত জনগণের রক্তঝরা গণ-আন্দোলনকে অবজ্ঞা করার শামিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাজনীতির আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা দেখতে পাচ্ছি। জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে ঘোষণা করে বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। মৌলিক সংস্কারকে গুরুত্বহীন করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণসহ জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গঠনের পথ সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। মানুষ সচেতন, বিশেষ করে বাংলার তারুণ্য, জুলাই বিপ্লবের যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তারা, এই যড়যন্ত্র সম্পর্কে তারা অবহিত রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে কতিপয় উপদেষ্টা বিভ্রান্ত করে দেশকে নতুন সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন- আজকে উপদেষ্টা পরিষদের জন্ম জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে হয়েছে, যারা উপদেষ্টা পরিষদে দায়িত্ব পালন করছেন তারা জুলাই বিপ্লবের হাজারো শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ জুলাই গণভোটের জন্য তাদের নিকট কোনো বাজেট নেই যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বাংলাদেশের মানুষ একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন চাই না। বাংলাদেশের মানুষ জুলাইয়ের যে ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, এই গণ-অভ্যুত্থানকে শতভাগ মর্যাদা দিতে চাই। আর এই গণ-অভ্যুত্থানকে যদি শতভাগ মর্যাদা দিতে হয়, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণ ভোটকে গুলিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই, আমরা একইদিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন মানি না মানবো না।
মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় দেশপ্রেমিক জনগণ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজনে আবারো রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের স্থিতিশীল পরিবেশ রক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, সরকার যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রাজপথে জনগণ নামতে বাধ্য হবে। তখন কেউ দমাতে পারবে না।
চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও নগর সেক্রেটারি ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, নগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি এসএম লুৎফুর রহমান, চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শফিউল আলম প্রমুখ।
উল্লেখ্য : গত ১৩ ই নভেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে এসব সিদ্ধান্ত জানান। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস।
জুলাই চেতনায় অন্তবর্তী কালীন সরকারের দায়িত্বের প্রধান তিনটি কাজের আওমী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে অপরাধীদের বিচার, সরকার ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনা সংস্কার নির্বাচন সম্পূর্ণ'সহ অন্তবর্তীকালীন সরকারের সফলতার কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা
তিনি জানান, গণভোটেই নির্ধারণ হবে আগামী সরকারের সংসদে প্রতিনিধিত্ব। সংবিধান সংশোধন সংস্কার বিভিন্ন বিষয়ে নীতি নির্ধারণে থাকবে সকল রাজনৈতিক ঐক্যমত।
ফেব্রুয়ারিতেই হতে চলেছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে গণভোট ও নির্বাচন একইসাথেই বাস্তবায়ন।
যে চার বিষয়ে হবে গণভোট, একটি প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে মতামত প্রকাশে গ্রহণ করা হবে গণভোট।
ক. নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
গ. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন করা হয়।
পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ :
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আদেশ জারি এবং নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজনসহ ৫ দফা গণদাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী পটুয়াখালী জেলা কমিটির নেতা-কর্মীরা। শুক্রবার পূর্ব পৌরসভার মোড়ে জেলা জামায়াতের আমীর পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য পদের প্রার্থী শূরা সদস্য জেলা জামায়াতের আমীর এডভোকেট নাজমুল আহসান এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম আল কায়সারীর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী এবিএম সাইফুল্লাহ, সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. হাবিবুর রহমান, পৌর সভার মেয়র প্রার্থী শিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আন নাহিয়ান প্রমুখ।
রাজশাহীতে বিক্ষোভ:
রাজশাহী থেকে: গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং পি.আর পদ্ধতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে রাজশাহীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল নগরীর গণকপাড়া মোড়ে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে আর কোনো স্বৈরাচারি সরকার দেশের মানুষ দেখতে চায় না। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের মাধ্যেমে দেশে বিপ্লব পরবর্তী মানুষের সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনুন। বক্তারা অর্ন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, কারও প্ররোচনায় পড়ে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে ভুলে যাবেন না। তাদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। যারা এ দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়, তারা জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চায় না। রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর এডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিমের সভাপতিত্বে ও মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর ও রাজশাহী সদর-২ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাহবুবুল আহসান বুলবুল, মো. শাহাদৎ হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
মৌলভীবাজারে বিক্ষোভ :
মৌলভীবাজার থেকে: জামায়াতে ইসলামী মৌলভীবাজার জেলার উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে। আওয়াামী ফ্যাসিবাদ ও তার দোসরদের দেশব্যাপী ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার প্রতিবাদে গতকাল বাদ জুমা জেলা শহরের দেওয়ানী মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব চত্বরে পৌঁছে সমাবেশে মিলিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জেলা আমীর ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ আলী, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী, পৌর আমীর হাফেজ মাওলানা তাজুল ইসলাম, ছাত্রশিবির শহর সভাপতি তারেক আজিজ, জেলা সভাপতি মো. ফরিদ উদ্দিন, সদর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মো. ইসমাইল আলী ও ছাত্রশিবির শহর সেক্রেটারি কাজী দাইয়ান আহমাদ প্রমুখ।