নড়াইল প্রতিনিধি:
নড়াইল আস্থা সংস্থার পরিচালক স্বপন রায়ের বিরুদ্ধে নিবন্ধন ছাড়াই সমবায় সমিতির নাম ব্যবহার করে উচ্চ সুদে ঋণ প্রদান, গ্রাহকদের কাছ থেকে অস্বাভাবিক শর্তে স্বাক্ষরিত চেক আদায় এবং বিভিন্ন অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে ‘উন্নয়ন ধারা সমবায় সমিতি’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বিষয়টি ছিল প্রশাসনের নজর এড়িয়ে।
সম্প্রতি নড়াইল সদর উপজেলার ভওয়াখালী গ্রামের ভ্যান–রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলামের সঙ্গে সুদ নির্ধারণ ও কিস্তি বুঝিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধ সৃষ্টি হলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন।
ভুক্তভোগী
তরিকুল ইসলাম জানান, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি দশ হাজার টাকা সঞ্চয় জমা রেখে ১৫ শতাংশ সুদে সপ্তাহে ২,৬০০ টাকা কিস্তি ও ১০০ টাকা সাপ্তাহিক সঞ্চয়ের শর্তে ১ লক্ষ টাকা ঋণ নেন। ঋণের মেয়াদ শেষে পুনরায় লোন চাইলে ম্যানেজার সুধাংশু তাঁর পাশ বই নিয়ে যান।
২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর তরিকুলের স্ত্রীকে কুড়িগ্রাম অফিসে ডেকে গ্যারান্টি হিসেবে দুই পাতা স্বাক্ষরিত চেক চাওয়া হয়। বিষয়টি জানার পর তরিকুল উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ জানালে পরিচালক স্বপন রায় তাঁর স্ত্রীর নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক জমা না দিলে ঋণ দেওয়া হবে না বলে জানান। জরুরি প্রয়োজন থাকায় তিনি অনিচ্ছাসত্ত্বেও চেক জমা দিয়ে ঋণ নেন।
পরে কিস্তি পরিশোধের কয়েক সপ্তাহ পর পাশ বই চান তরিকুল। তখন বই ফেরত পেয়ে দেখেন,
সুদের হার ২৪ শতাংশ,
মেয়াদ এক বছর নয়, মাত্র ৯ মাস।
আপত্তি জানালে বই সংশোধনের আশ্বাস দেওয়া হলেও তা করা হয়নি। কিস্তি বন্ধ করলে সমাধানের বদলে তাঁকে চেক ডিজঅনার মামলার ভয় দেখান আদায়কারী শ্যামল।
ভুক্তভোগী
তরিকুল আরো বলেন,
“আমি এখন বিপদে আছি—অতিরিক্ত সুদ, চাপ, আর মামলার ভয়। কোথায় গেলে বিচার পাব?”
কুড়িগ্রাম আস্থা সংস্থার অফিসে গিয়ে কথা হয় মাঠকর্মী শ্যামলের সাথে।
তিনি বলেন স্বপন বাবু উন্নয়ন ধারা সমবায় সমিতি নাম দিয়ে নিবন্ধন চাইলেও সমবায় অফিস নিবন্ধন দেয়নি,পরে সমাজ সেবা থেকে নিবন্ধন নিতে পারে,তিনি এই বিষয়ে আর কিছু জানেন না বলে জানান।
উন্নয়ন ধারা সমবায় সমিতি'র ম্যানেজার সুধাংশু বাবু'র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমি এখন আর ঐ অফিসে চাকুরী করি না।সমিতি কার্যক্রম এখন স্বপন রায় পরিচালনা করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুর রহমানের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি নিশ্চিত করেন—
‘উন্নয়ন ধারা সমবায় সমিতি’ নামে নড়াইলে কোনও নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান—
কুড়িগ্রামে আস্থা সংস্থার অফিসে গিয়ে ‘উন্নয়ন ধারা’ নামে দুইটি পাশ বই পাওয়া গেছে। তবে পরিচালক স্বপন রায় দাবি করেন, এগুলো সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁর দাবি—“কেউ ষড়যন্ত্র করে রেখে গেছে।”
ঋনগ্রহীতা তরিকুল ইসলামকে মুখোমুখি করার পরও স্বপন রায় তাঁর কাছে লোন দেওয়া বা চেক নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।