1. emon@frilix.com : Emon Hasan : Emon Hasan
  2. editormrahman80@gmail.com : Mizanur Rahman : Mizanur Rahman
  3. info@www.janatarkatha24.com : admin :
  4. wpapitest@config.com : wpapitest :
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৮ অপরাহ্ন

রাজশাহী জেলা তানোর সহ সাড়ে ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত

রিপোটারের নাম
  • প্রকাশিত : শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩৭ বার পড়া হয়েছে

সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধি:

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের চার জেলায় প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর আমন ধানের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গবেষক ও কৃষকদের মতে, এ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ উর্বর কৃষিজমিতে বাণিজ্যিক মাছ চাষের জন্য অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন। এতে বৃষ্টির পানি স্বাভাবিক নিষ্কাশনের পথ হারিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন হাজারো কৃষক।

সরকারি তথ্য বলছে, গত এক দশকে শুধু রাজশাহী জেলাতেই পুকুরের সংখ্যা ১০ হাজার বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ২৭৫টিতে। এসব পুকুরের অধিকাংশই গড়ে উঠেছে কৃষিজমির মাঝখানে কোনো নিষ্কাশনব্যবস্থা ছাড়াই।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের রাজশাহী পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, গত মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত রাজশাহীতে ৬১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বৃষ্টির ফলে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শত শত আমন ধানের ক্ষেত ডুবে গেছে। একই সঙ্গে অনেক মাছের পুকুর উপচে গিয়ে মাছ ভেসে গেছে পাশের জলাভূমি ও ফসলি জমিতে।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাবিনা বেগম বলেন, সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতে উত্তরাঞ্চলের চার জেলায় ১৯ হাজার ৫৬৮ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের জমিতে।

তিনি বলেন, “নিম্নাঞ্চলগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির প্রধান কারণ হলো কৃষি জমির মাঝখানে পরিকল্পনাহীনভাবে বিপুল সংখ্যক পুকুর খনন। এসব খননে কোনো নকশা বা নিষ্কাশন পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়নি। ফলে ভারী বৃষ্টিতে পুকুরের পানি উপচে ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে। পানি বের হওয়ার পথ না থাকায় জমি দীর্ঘসময় পানিতে ডুবে থাকছে, এতে ধানক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।”

সাবিনা বেগম জানান, উপজেলা-ভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনো সংগ্রহ চলছে। “কিছু এলাকায় ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত, আবার কোথাও গাছ মাটিতে হেলে পড়েছে। জমির পানি কত দ্রুত নামবে তার ওপরই চূড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করছে,” বলেন তিনি।

অন্যদিকে, রাজশাহীর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, তানোর ও বাগমারা উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ভারী বৃষ্টির কারণে বহু পুকুর উপচে মাছ ভেসে গেছে।
“ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ হয়নি। দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক হিসাব পাওয়া যাবে,” বলেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, “ভারী বৃষ্টিপাত ও অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে কিছু এলাকায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।”

তিনি জানান, রাজশাহী জেলায় ৬৭টি বিল রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই খনন করে পুকুরে পরিণত হয়েছে এবং সেগুলো সম্পূর্ণভাবে চারদিক দিয়ে ঘেরা। “বাকি ১০ শতাংশ বিল এখনো খোলা থাকলেও সেখানে সম্মিলিতভাবে মাছ চাষ চলছে। ফলে বৃষ্টির পানি আর আগের মতো খাল-বিল হয়ে নদীতে যেতে পারছে না,” বলেন তিনি।

তানোর উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টির কারণে তাঁর আট বিঘা জমির ধান মাটিতে হেলে পড়েছে। “মাঠের প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষক একই অবস্থায়। বাধ্য হয়ে আধাপাকা ধান কেটে ফেলতে হবে, না হলে গাছেই অঙ্কুরোদগম শুরু হবে,” বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “আগে ভারী বৃষ্টি হলেও পানি সহজেই বিল হয়ে চলে যেত। কিন্তু এখন ক্ষেতের চারপাশে পুকুর থাকায় পানি আটকে যাচ্ছে।”

ধানচাষে লাভ কমে যাওয়ায় অনেক কৃষক মাছচাষে ঝুঁকছেন। তানোরের মাছচাষি আব্দুর রহমান বলেন, “আমন ধান চাষে বড়জোর ২০ হাজার টাকা পেতাম, এখন মাছ চাষে দ্বিগুণ আয় হচ্ছে।”

তবে তাঁর প্রতিবেশী কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, “যখন তাঁর পুকুর উপচে পড়ল, আমার সব চারা জলের নিচে চলে গেল। তিনি লাভ পেলেন, আমি সব হারালাম।”

পরিবেশবিষয়ক গবেষণা সংগঠন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম বলেন, “বিলগুলোতে একের পর এক পুকুর খনন করে চারদিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বৃষ্টির পানি আর খাড়ি হয়ে নদীতে যেতে পারছে না। রাজশাহীতে প্রচুর পুকুর কাটা হয়েছে, ফলে প্রাকৃতিক নিষ্কাশনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “উন্নয়নের নামে আমরা প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ধ্বংস করছি। ন্যাচারাল ওয়েতে পানি যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কৃষি ও পরিবেশ—দুইই এখন হুমকির মুখে।”

কৃষিবিদ ও স্থানীয়রা বলছেন, যদি অবিলম্বে কৃষিজমিতে পুকুর খননে নিয়ন্ত্রণ ও বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে রাজশাহী অঞ্চলের ফসল উৎপাদন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
Copyright © 2024 Frilix Group
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD