সুমন খন্দকার, ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি: মুসলমান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় আনন্দ ও খুশির দিন হলো ঈদুল আযহা (কোরবানী ঈদের দিন) আর মাত্র বাকী কয়েকদিন। ব্যবসায়ীরা এখন নতুন জিনিস কেনা বেচায় ব্যস্ত সময় পার করছে।
যার যার সামর্থ মতো নতুন নতুন জামা কাপড়ের সাথে চামের জুতা, স্যান্ডেল ও চামড়া শিল্পের বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা কিনতে দেখা গেছে। ভালো নেই ইসলামপুর উপজেলার জুতা সেলাই করা (মুচি) সম্প্রদায়রা।
বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এদের মধ্যে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। মহামারী করোনা পরিস্থিতি পর থেকে যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে ইসলামপুরের মুচি সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর উপর।
আগে যে কোন বড় বড় উৎসবে মুচি দোকানগুলো পুরাতন জুতা ও স্যান্ডেল সেলাই করার জন্য মানুষ যে পরিমাণ ভিড় করত: এখন আর সেই ভিড় দেখা যায় না। মানুষ আর আগের মতো পুরাতন জিনিসের প্রতি চাহিদা নেই। তারপরেও যাদের নতুন জুতা ও স্যান্ডেল কিনার সামর্থ নেই তারা পুরাতন জুতাকে নতুন করতে ভিড় জমাচ্ছে মুচি সম্প্রদায়ের কাছে। পুরাতন জুতাকে খালি ও সেলাই করে পায়ে দিয়ে আনন্দ উপভোগ করবেন তারা।
সরেজমিনে, ইসলামপুর থানা মোড়, মাদরাসা মোড়, ইসলামপুর বাজার, রেলওয়ে ষ্টেশন ও রেল গেইট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কাজ না থাকায় মুচিরা অলস সময় পার করছে। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী কিন্তু মুচি দোকান গুলোতে ভিড় নেই বললেই চলে।
ময়মনসিংহ জেলার কোতয়ালী থানার বেগুনবাড়ী বয়ড়া গ্রামের সন্তোষ (৫৯) গত ৩৫ বছর যাবত ইসলামপুরে বিভিন্ন সরকারি,বেসরকারি অফিসে ও মুড়ে মুড়ে ঘুরে জুতা সেলাই ও কালির কাজ করে আসছে। জন্মের পর থেকে যখন বড় হয়েছেন তারপর থেকেই তিনি এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু এখন তেমন কোন আয় হয় না। দিনে ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। এতে সংসার চলে না।
ইসলামপুর সাবেক মুক্তিযোদ্ধা অফিস সংলগ্ন সান্টু বিমল (৬০) বলেন ঈদের মাত্র কয়েক দিন বাকী রয়েছে কিন্তু তেমন কোন কাজ কর্ম নাই। এখন কি করে সংসার চালাবো সে চিন্তয় রয়েছি। তিনি আরোও বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে উর্ধ্বগতি সারাদিন যা কামাই করি তা দিয়ে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর।
এমন করেই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন পোষ্ট অফিস সংলগ্ন জুতা সেলাইয়ের (মুচি) কাজ করা তুলসি (৪৫) তিনি বলেন আমি পোষ্ট অফিসের গেটের সামনে ২০ বছর যাবত মুচির কাজ করি। সামনে ঈদ থাকলেও গত কয়েক দিন ধরে তেমন কোন কাজ কর্ম নাই।
মাদরাসা মোড়ের গুপ্তি রবিদাস (৫৫) জানান, আমি ১০ বছর যাবত খুলা আকাশের নিচের পুরাতন জুতা ও স্যান্ডেল (মুচির) কাজ করে আসছি। মানুষ এখন আধুনিক। আগে একজুড়ো স্যান্ডেল বা জুতা অনেক দিন পায়ে দিত। ছিড়ে গেলে আবার আমাদের কাছে এসে সেলাই করে নিত। কিন্তু বর্তমানে আগের মতো কাজ হয় না। মাঝে মাঝে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের লোকজন এসে নাম ঠিকানা নিয়ে যায়।
রেলগেইটে মুচির কাজ করা বাবুল চন্দ্র ঋষি (৪৫) জানান, আমি ১০ বছর বয়স থেকেই মুচি কাজের সাথে জড়িত। বর্তমান সময়ে কাজ কর্ম এত খারাপ হয়েছে যা আপনাদের কাছে বলার মতো না। খুব কষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনযাপন করছি।
এ রকমভাবে অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, অনেকেই জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন। বর্তমানে সময়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও এ কাজের প্রতি মানুষের চাহিদা দিন দিন কমতে থাকায় বেশিরভাগ মুচিরা অলস সময় পার করছেন। আবার কেউ বাক্স গুছিয়ে চলে গেছেন অন্য পেশাতে।
ফকির রবি দাস বলেন, কোন কাম কাজ নাই বইসা তাহি, কি করব,গতবছর করোনার সময় কিছু সহযোগিতা পেলেও এবছর কোনো সহযোগিতা পাইনি।
সুমন খন্দকার
ইসলামপুর,জামালপুর।
০৭.০৭.২০২২
Leave a Reply